তীব্র শীতের অনুভূতি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে গেলে শীত বেশি অনুভূত হয়ে থাকে। এ ছাড়া তীব্র শীতের চার কারণ চিহ্নিত করেছেন তারা।
ঢাকা শহরে শনিবার (৭ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্ত অনুযায়ী তা শৈত্যপ্রবাহ নয়। কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেলে ওই অঞ্চলের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হয়ে থাকে। এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০-এর নিচে নামেনি। কিন্তু শীতের তীব্রতা আবহাওয়ার উপাত্তকে ভুল প্রমাণ করছে। এই ভুলের কথা স্বয়ং আবহাওয়া অধিদপ্তরও স্বীকার করেছে।
তাপমাত্রা মাপার থার্মোমিটারে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হলেও অনুভূত তাপমাত্রা ছিল আরও প্রায় ৪ ডিগ্রি কম, অর্থাৎ ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত।
কেন এই বৈপরীত্য? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একাধিক আবহাওয়াবিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত চার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে প্রায় ৩০০ মিটার পর্যন্ত কুয়াশার দেয়াল সূর্যের তাপকে ভূপৃষ্ঠে আসতে বাধা দিচ্ছে, পূবালী বাতাস এ সময় ঘণ্টায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হওয়ার কথা থাকলেও ঘণ্টায় প্রায় ১৮ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হচ্ছে, দিনে মাত্র দুই থেকে তিন ঘণ্টার সূর্যালোক পাওয়া যাওয়ায় ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে পারছে না এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে গিয়ে শীতের অনুভব বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে গেলে শীত বেশি অনুভূত হয়ে থাকে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেশি না কমলেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে এসেছে।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে এ সময় স্বাভাবিকভাবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু গতকাল শনিবার রেকর্ড হয়েছে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অপরদিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, থাকার কথা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপামাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়া শীতের অনুভব বেড়ে যাওয়ার জন্য অন্যতম কারণ।’
তবে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হওয়ার পেছনে কুয়াশার চাদরকে বেশি দায়ী করে আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতের দিল্লি হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০ বা ৪০০ মিটার ওপর পর্যন্ত থাকা কুয়াশার চাদর কেটে গেলে শীতের তীব্রতা কমে আসবে। কিন্তু তা কবে নাগাদ কমবে এখনই কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আজ হয়তো কিছুটা আভাস পাওয়া যেতে পারে।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত অনুযায়ী শনিবার (৭ জানুয়ারি) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড।