শীতে কাঁপছে উত্তর জনপদের মানুষ
সপ্তাহ জুড়ে হিম বাতাসের সাথে শীতে কাঁপছে উত্তর জনপদের মানুষ। মধ্যরাত থেকে বেলা অবধি ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে এঅঞ্চলের চারপাশ। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষ। এ অবস্থায় দুর্ভোগ বেড়েছে শ্রমজীবী অসহায় মানুষের। স্থবির হয়ে পড়েছে উত্তরের জীবনযাত্রা।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে উত্তরের রংপুর বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বিভাগীয় নগরী রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে রংপুরের আজকের তাপমাত্রাই সর্বনিম্ন বলে জানায় রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান এ তথ্য জানান। শৈত্যপ্রবাহের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রংপুরের ৩ জেলা দিনাজপুর, নীলফামারী ও পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন দিনের তাপমাত্রা বাড়বে যার ফলে কুয়াশার প্রভাব কমে আসবে। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে কুয়াশা কমে যাবে এবং দিনের তাপমাত্রা বাড়বে। কুয়াশা কমলে দিনের বেলায় থাকবে না তবে রাতের দিকে কুয়াশা পড়তে পারে।’
হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার পাদদেশে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের অবস্থান থাকায় এই মৌসুমে তীব্র শীতের মুখে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষেরা। বিকেল গড়ালেই উত্তর-পূর্বকোণ থেকে বইতে থাকে ঠান্ডা বাতাস। নিম্নবিত্ত মানুষগুলো শীতবস্ত্রের অভাবে ফুটপাতের দোকানগুলোতে সাধ্যমত গরমের কাপড় কিনতে দেখা যায়। শীতের তীব্রতায় দুর্ভোগের শেষ নেই খেটে খাওয়া মানুষের।
রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা গোলাম হোসেন জানান, সকালে শীতের তীব্র প্রকোপের কারণে কাজে যেতে খুব কষ্ট হয়। তবুও পেটের তাগিদে কাজে যেতেই হয়। কাজ না করলে তো আমার সংসার চলবে না। কেউ তো আগেরমত এসে খোজ নেয় না। সরকারী লোকজনকে এখনো চোখে দেখলাম না।
মহিন্দ্রা বাজার এলাকার দিনমজুর জামাল উদ্দিন জানায়, যে কুয়াশা তাতে আবার সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় ঠান্ডা বাতাস। এ বাতাসের কারণে শীতের মাত্রা বেড়ে যায়। আলু ক্ষেতে কাজ করতে গেলে হাত-পা যেন অবশ হয়ে আসে। কিন্তু জীবিকার তাগিদে কাজে বের হতে হয়।
গ্রামের বেশ কজন নারীর সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের তারা জানায়, সন্ধ্যার পর বাতাসের সঙ্গে ঝরতে থাকে বরফের মতো ঠান্ডা। এ সময়টাতে মাত্রাতিরিক্ত শীত অনুভূত হচ্ছে। রাতে কম্বল ও লেপ নিলেও বিছানা বরফের মতো লাগে। শীতের দূর্ভোগ বেড়েছে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে। এসব মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার যে ত্রাণ দিয়েছে তা একেবারেই অপ্রতুল বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে শীতে প্রকোপে বেড়েছে নানান শীতজনিত রোগ। রংপুর মেডিকেল ঘুরে দেখা গেছে, জ্বর, সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়েরিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ বাড়ছে। হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক ঠান্ডাজনিত রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। গত এক সপ্তাহে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়ে এখনো চিকিৎসা নিচ্ছে তিন শতাধিক রোগী। এর মধ্যে সাতদিনে ১৫ শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। যাদের সবার বয়স ১ মাস থেকে চার বছরের মধ্যে।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স মোছা. শিখিলী খাতুন জানান, এবার কোল্ড ডায়রিয়ায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০টি শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে।
রংপুর সিভিল সার্জন ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পৌষের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রংপুর অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। শীতে শিশু ও বয়স্করা কাবু হচ্ছেন বেশি। তবে চলতি সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।