ছবি:টোকিও বাংলা নিউজ
আমি এক অদ্ভুত সৃষ্টি! দুই হাত,দুই পা বিশিষ্ট! জন্তু,জানোয়ার আর প্রাণী শব্দের প্রায়োগিক তফাৎ খুব একটা বুঝিনা।তবে জন্ম নিয়েছিলাম মানুষের ছদ্মাবরণে মধ্যবিত্ত আর নিম্মমধ্যবিেত্তর মাঝামাঝি এক পরিবারে বাবা-মায়ের বড় সন্তান হিসেবে।
বেড়ে উঠার শুরুতেই বাবা-মা আমাকে নিজের এবং পরিবারের কল্যাণার্থে "গাধা" হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।সংসার টেকাতে সংসারের বড় ছেলেদের(মেয়ে না) নাকি তা'ই হতে হয়!আমি না "মানুষ" হওয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছিলাম।
এ আমার জন্ম,জন্মান্তরের শখ ছিলো।কারণ,বোধ-বুদ্ধি বিকাশের প্রাক্কালে আমি ভবের সেরা সৃষ্টি "মানুষ' এর অনেক গল্প শুনেছি যারা নাকি আবার দেব-দেবী'র পূজা করে!কোনো এক কবি নাকি বলেছিলেন,"মানুষ হইয়্যা মানুষের পূজা মানুষেরই অপমান"। আমার মনে হয় কবিরা একটু পাগল কিছিমের হয়।আমার হিসেবে মানুষ মানুষকেই পূজা করার কথা।একারণেই আমি "মানুষ" হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। আর এর খেসারত দিতে গিয়ে আমি পারিপার্শ্বিক চাপে তাপে বিবর্তিত হতে হতে উপরোল্লিখিত সৃষ্টিতে পরিণত হয়েছি।যার বোধশক্তি আর বাকশক্তি আছে,কিন্তু কিচ্ছু করার,না পারলে চুপ থাকার শক্তিও এখন আর নাই।কারণ, বকর বকর করার চাইতে চুপ থাকতে অনেকবেশি শক্তি আর আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা লাগে বলে আমার বিশ্বাস।একারণে অনেকটা "মানুষ বনসাই" আমি এখন!
তারপর থেকে আমি একজন "মানুষ" খোঁজা শুরু করলাম পূজো করবো বলে।খুঁজতে খুঁজতে ৪৫ বছর পার করে দিলাম।তারাশংকরের "মা" উপন্যাসের নায়ক তার মাকে প্রশ্ন করেছিলেন,"জীবন এতো ছোটো ক্যানে মা?" আমার মনে হয় জীবন একেবারে ছোটোও নয়!এ ৪৫ বছরের জীবনকালে আমি দু'চারজন মানুষের দেখা যে একেবারে পাইনি,তা কিন্তু নয়।কিন্তু কাছাকাছি যেতে পারিনি বলে এ জীবনে আর আমার "মানুষ" কে পূজো করা হয়ে ওঠেনি।
তবে এ জীবনে অনেক দেব-দেবী'র সাক্ষাৎ আমি পেয়েছি।মেলামেশার সুযোগও হয়েছে।তাদের লীলার যে রূপ আমি প্রত্যক্ষ করেছি,তাতে তাদের করুণালাভে কিংবা করুণা করতে আমি করুণাহীন করুণভাবে হে করুণাময়!
আর সি