
ছবি: আপন দেশ
বাংলার মানুষের কাছে বারবার মৃত্যুর প্রতীক হয়ে উঠে এসেছে শকুন। মৃতদেহভূক এই প্রাণীটি একসময় আকাশে অবাধে ঘুরে বেড়াত। তবে এখন আর শকুনের দেখাই পাওয়া যায় না। পক্ষীবিশেষজ্ঞদের কাছে এই হঠাৎ সংখ্যা হ্রাস রীতিমতো চিন্তার বিষয়। তবে সম্প্রতি এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ সরকার। শকুন সংরক্ষণের জন্যই বেশ কিছু ওষুধের উপর নিষেধাজ্ঞা আনল সরকার। এই প্রতিটি ওষুধই শকুনের মৃত্যুর কারণ হিসাবে স্বীকৃত।
মূলত গবাদিপশুর মৃতদেহই শকুনের প্রধান খাবার। আর এইসব মৃতদেহের সঙ্গে তাদের শরীরে মেশে সেইসমস্ত ওষুধ, যা গবাদি পশুদের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছিল। ১০ বছর আগেই গবাদি পশুর উপর ডাইক্লোফেনাক প্রয়োগ নিষিদ্ধ করেছিল বাংলাদেশ সরকার। ব্যথা-বেদনানাশক এই ওষুধ অতি দ্রুত কাজ করে ঠিকই। কিন্তু এর থেকেই শকুনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে বিষ। আর এইবার একই কারণে নিষিদ্ধ করা হল প্রদাহনাশক কিটোপ্রফেন। ফলে শকুনের মৃত্যুর কারণ হিসাবে স্বীকৃত কোনো ওষুধই আর গবাদি পশুর উপর প্রয়োগ করা যাবে না। সারা পৃথিবীতে এমন সিদ্ধান্ত এই প্রথম।
ভারতীয় উপমহাদেশে মূলত চারটি প্রজাতির শকুনের দেখা পাওয়া যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশ, পূর্বভারত এবং পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে তাদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে ৯০-এর দশক থেকেই তাদের সংখ্যা কমতে থাকে। এক দশকের মধ্যে ৯০ শতাংশ কমে যায় শকুনের সংখ্যা। বিশেষভাবে সংকটজনক প্রাণী হিসাবেও স্বীকৃতি পায় এশীয় শকুন। আর এই সংখ্যাহ্রাসের অন্যতম কারণ যে গবাদি পশুদের ওপর প্রয়োগ করা ওষুধ, সে-কথা বারবার বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতেও ২০০৬ সালে ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বলবৎ করা যায়নি। বাংলাদেশ অবশ্য ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার একেবারেই কমিয়ে এনেছে। আর এবার কিটোপ্রফেনের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ায় বিলুপ্তপ্রায় শকুনের সংখ্যা বেশ খানিকটা বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিপন্ন প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে এমন উদ্যোগ ও সচেতনতা সত্যিই জরুরি।
আপন দেশ/বিশেষ