Apan Desh | আপন দেশ

৮৫টি নদীর পানি নিয়ে এশিয়ার প্রথম ‘পানির জাদুঘর’ বাংলাদেশে

বিশেষ সংবাদদাতা:

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

৮৫টি নদীর পানি নিয়ে এশিয়ার প্রথম ‘পানির জাদুঘর’ বাংলাদেশে

ছবি: আপন দেশ

“আমাদের সেই গ্রামের নামটি খঞ্জনা

আমাদের সেই নদীর নামটি অঞ্জনা…”

 

ক্ষণিকায় লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। খঞ্জনা গ্রামের অস্তিত্ব আজও আছে কিনা জানা নেই। কিন্তু অঞ্জনা নদী কেবলমাত্র টিকে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের লেখাতেই। ক্রমাগত মানুষের কার্যকলাপে শুকিয়ে গেছে অঞ্জনা। পরিণত হয়েছে খালে। শুধুই কি অঞ্জনা? বাংলার বহু নদীই ঠিক এভাবেই বিলীন হয়ে গেছে ভূখণ্ডে। গতিপথ হারাচ্ছে আরও অনেক নদী। আর তাই মানুষকে সচেতন করতেই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। কেবলমাত্র নদী-সংক্রান্ত তথ্য, ছবি এবং নমুনা সংরক্ষণের জন্য গড়ে তুলেছে আস্ত একটি মিউজিয়াম— ‘পানি জাদুঘর’ (Water Museum)। যেখানে গেলেই দেখা মিলবে সংরক্ষিত থাকা ৮৫টি নদীর পানির।

হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। নদীর জল (River Water)। বাংলাদেশের পটুয়াখালির নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা বাজারের নিকটবর্তী এই মিউজিয়ামে গেলেই দেখা মিলবে থরে থরে সাজানো জলভর্তি কাচের বয়াম। কোনোটার পানি খানিক ঘোলাটে। কোনোটা আবার ঈষৎ নীল। কোনোটা সবুজ। প্রতিটি বয়ামের গায়ে যত্ন নিয়ে লেখা রয়েছে সংশ্লিষ্ট নদীর নাম, সংগ্রহের তারিখ। এ যেন এক রূপকথার জগৎ।

পদ্মা, যমুনা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, রায়মঙ্গল, তিস্তা, টাঙ্গন-সহ সবমিলিয়ে মোট ৮৫টি নদীর পানি সংরক্ষিত হয়েছে এই অভিনব জাদুঘরে। যার মধ্যে ৫৭ নদীর গতিপথ বিস্তৃত ভারত, নেপাল, ভুটান কিংবা মায়ানমারের বুকেও। বাকি ২৮টি নদী সম্পূর্ণ অন্তর্দেশীয়। সেগুলির কোনোটা আবার অন্য কোনো নদীর শাখানদী কিংবা উপনদীও বটে। শুধুমাত্র প্রবাহের অবস্থান বদলের সঙ্গে সঙ্গে জলের মান কিংবা রং-ও বদলে যায়- তা সহজেই ফুটে ওঠে সংরক্ষিত নমুনাগুলি থেকে।

তবে শুধু নদীর পানিই নয়। প্রতিটি নদীরই সম্পূর্ণ গতিপথ, পানিপ্রবাহ, উৎপত্তি, বাস্তুতন্ত্র এবং সর্বোপরি দূষণ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যও প্রদর্শিত হয়েছে এই মিউজিয়ামে। ৫০০ বর্গফুটের ছোট্ট এই মিউজিয়ামে রয়েছে বাংলার হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদী সংক্রান্ত ঐতিহ্য এবং সাধারণের জীবিকা অর্জনের নানা উপকরণ। সেই তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নৌকা, মাছ ধরার জাল, পলি মাটির তৈরি সামগ্রী-সব কিছুই।

তবে আজ নয়। বছর সাতেক আগের কথা। ২০১৪ সালের শেষের দিকে অভিনব এই মিউজিয়াম তৈরির উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘আভাস’। এই সংস্থারই প্রায় ৪৮৫ জন সদস্য মিলেই বন্দোবস্ত করেছিলেন অস্থায়ী একটি জায়গার। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন প্রকল্পের আওতায় সেখানেই গড়ে তোলা হয় জাদুঘরটি। যত দিন গড়িয়েছে তত বদলেছে জাদুঘরের কাঠামো। বেড়েছে সংরক্ষিত সামগ্রীর বিস্তৃতিও। এশিয়ার একমাত্র এবং সর্বপ্রথম ‘জল জাদুঘর’ হওয়ায় এই মিউজিয়ামে বিদেশি পর্যটকদেরও আনাগোনা লেগে থাকে সারা বছর। কিন্তু তারপরেও মিউজিয়ামের জন্য স্থায়ী জায়গার বন্দোবস্ত করে দিতে এগিয়ে আসেনি বাংলাদেশ প্রশাসন। সরকারের তরফে এই উদ্যোগ না নিলে, হয়তো একটা সময় পর অস্থায়ী এই জায়গা ছাড়তে হবে মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু আদৌ কি মিলবে সাহায্য? জানা নেই। সেই কাতর আর্জি নিয়ে সরকারের দিকে চেয়ে রয়েছে বেসরকারি সংস্থা আভাস…

 

আপন দেশ/বিশেষ

 

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়