Apan Desh | আপন দেশ

স্কটিশ পার্লামেন্টে শেখ হাসিনার আহ্বান

বিশ্বকে জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে

মহি ইউ খান মামুন, গ্লাসগো থেকে

প্রকাশিত: ২২:০৪, ৩ নভেম্বর ২০২১

আপডেট: ১২:৪২, ২৭ জানুয়ারি ২০২২

বিশ্বকে জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে

ছবি:টোকিও বাংলা নিউজ

শেখ হাসিনার গতকাল সন্ধ্যা সোয়া আটটার দিকে প্রথম বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্কটল্যান্ড পার্লামন্টে প্রবেশ করেন । বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বকে জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে।

স্কটিশ পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশী এমপি ফয়ছল চৌধুরী এমবিই’র আয়োজনে এবং স্কটিশ পার্লামেন্টের স্পিকার আলিশন জনসনের আমন্ত্রণে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে স্কটিশ পার্লামেন্টে এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তথা রাজনীতিবিদ যিনি এই সম্মানে ভূষিত হলেন।
১৫ মিনিটের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমেই ধন্যবাদ জানান ফয়ছল চৌধুরী এমবিইকে এমন আয়োজন করার জন্য। এছাড়া স্কটিশ জনগনের আথিতেয়তায় তিনি মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের গত ১ দশকের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন। সেই সাথে বাংলাদেশের আগামী দশকের কর্ম ও উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে ধারনা দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, আমরা গ্লাসগোতে এসেছি সারা পৃথিবী মিলে পরিবেশ ও জলবায়ূ উন্নয়নে একটি টেকসই পন্থা খুজে বের করার জন্য। সম্প্রতি আইপিসিসি সিক্স এসেসমেন্ট রিপোর্টের একটি গবেষনায় দেখা গেছে পৃথিবীতে উষ্ণতা বেড়েছে মারাত্নক, আমাদের পৃথিবীকে উষ্ণতা থেকে রক্ষা করতে হবে। মানুষের সৃষ্টি পরিবেশ বিপন্নতার জন্য বাংলাদেশের মতো দেশগুলো মারাত্নক ঝুকিতে রয়েছে। আমরা মাত্র শূণ্য দশমিক ৪৭ শতাংশ অবদান রাখছি উষ্ণতা বৃদ্ধিতে কিন্তু পৃথিবীর বড় বড় দেশের জন্য আমাদেও ঝুঁকি নিতে হচ্ছে মারাত্নক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিলে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ট্রাষ্ট ফান্ড গঠন করেছে। ৪৮০ মিলিয়ন ইউএস ডলার ইনভেষ্ট করে বাংলাদেশ সরকার ৮০০ প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে জলবায়ু রক্ষার গবেষনার জন্য। বাংলাদেশের ডেল্টা প্ল্যানে জলবায়ু রক্ষার জন্য বিশদ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা স্কটিশ পার্লামেন্টের বক্তব্যে তিনি জলবায়ূ সম্মেলনে যে ৪টি প্রস্তাব দিয়েছেন সেই প্রস্তাবও তুলে ধরেন। সব শেষে তিনি বাংলায় উপস্থিত স্কটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটির সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই প্রথম দেখলাম বিশ্ব নেতারা সংকট মোকাবিলায় একসাথে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছেন। এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র কোভিডের বাস্তবতার কারনে। আমি এর আগে কখনো বিশ্ব নেতাদের মধ্যে একসাথে কাজ করার কোন তাড়না দেখিনি।

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, কার্যকর ও পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়ন হবে সমৃদ্ধি অর্জনের মূল চাবিকাঠি। তিনি এমসিপিপি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য কিছু প্রস্তাব পেশ করেন।

সিভিএফ ও ভালনারেবল ২০ (ভি-২০) সভাপতি শেখ হাসিনা একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন, প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে অবশ্যই ব্যাপকভিত্তিক এনডিসি (জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান) পেশ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। উচ্চাভিলাষী প্রভাব প্রশমন প্রয়াস ছাড়া শুধু অভিযোজনব্যবস্থা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবগুলোকে ধীর, বন্ধ ও পাল্টানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
আরেক প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ওপর বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের ব্যাপারে উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, অভিযোজন ও প্রভাব প্রশমনের ক্ষেত্রে জলবায়ু অর্থায়ন বিতরণের মধ্যে ৫০: ৫০ অনুপাত থাকা উচিত।

সবশেষ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় সাশ্রয়ী মূল্যে সবুজ প্রযুক্তির প্রসারের পরামর্শ দেন, যাতে মুজিব জলবায়ু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বনেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবের অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি মোকাবিলায় বৈশ্বিক সম্মিলিত প্রচেষ্টার সমন্বয়ে জলবায়ু কর্মসূচির বিষয়ে তাঁদের সংকল্প ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে গ্লাসগোতে সমবেত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে কোনো দেশই মুক্ত নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মানবজাতির সবচেয়ে গুরুতর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য এটি একটি বড় হুমকি। যদিও আমরা বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমনের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশের কম অবদান রাখি।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, চরম তাপমাত্রা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, বন্যা, খরা, অধিকতর তীব্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঋতু পরিবর্তন, নদীভাঙন, সমুদ্রের অম্লকরণ বাংলাদেশ ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অন্য দেশগুলোর লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিকে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।

শুরুতেই স্কটল্যান্ডের প্রথম বাংলাদেশী এমপি ফয়ছল চৌধুরী এমবিই’এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। একই সাথে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশীদের অবদান তুলে ধরেন। 
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনা কন্যা সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ আরো অনেকে।

স্কটল্যান্ডের এডিনবরা থেকে

আর সি

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়